অবচেতন মন
অবচেতন মন (Subconscious Mind) হল আমাদের মনের সেই অংশ যা আমাদের সচেতন চিন্তা এবং অনুভূতির বাইরে কাজ করে। এটি আমাদের অভ্যাস, স্মৃতি, স্বয়ংক্রিয় প্রতিক্রিয়া এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে। অবচেতন মন হল মনের গোপন ক্ষমতা, এই মনের নিয়ন্ত্রণ কৌশল জেনে সঠিক প্রয়োগ করতে পারলে আমাদের ইচ্ছা মোতাবেক অবচেতন মন ও জীবন পরিবর্তন করতে পারি, আমাদের স্বপ্ন বা কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিতে পারি। অবচেতন মনের প্রভাব মানসিক স্বাস্থ্য শক্তিশালী করে, ভয় দূর করে। অবচেতন মনের শক্তি ব্যবহার করে আমরা আমাদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারি। সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি ও অভ্যাসগুলি গ্রহণ করে এবং ইতিবাচক চিন্তা করে আমরা আমাদের অবচেতন মনকে আমাদের পক্ষে কাজ করাতে পারি। মনোবিজ্ঞান বিদ্যার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এই অবচেতন মন।
অবচেতন মন (Subconscious mind) Photo by pixabay.com |
অবচেতন মন সম্পর্কিত এই লেখাটি তুলনামূলকভাবে অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে। অনেক কাঁটছাট করেও এরচেয়ে সংক্ষিপ্ত করতে পারলাম না। পাঠকের প্রতি অনুরোধ থাকবে লেখাটি ধৈর্য ও মনোযোগের সাথে পড়ার।
অবচেতন মন সম্পর্কে জানার পূর্বে মানুষের মন সম্পর্কে কিছু ধারণা নেয়া প্রয়োজন। নিম্নে মানুষের মন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলঃ
মন কত প্রকার ও কি কি?
মনোবিজ্ঞানী সিগমুণ্ড ফ্রয়েড মনোজগতকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছেনঃ
১। চেতন মন (Conscious Mind)
২। অচেতন মন (Unconscious Mind)
৩। অবচেতন মন (Subconscious Mind)
১। চেতন মন (Conscious Mind)
চেতন মনে জাগ্রত অবস্থায় মানুষ পারিপার্শ্বিক জগতের সাথে সংযোগ রাখে। সিগমুণ্ড ফ্রয়েডের মতে, ১০ শতাংশ চেতন অবস্থায় থাকে। আর বাকী ৯০ শতাংশই অবচেতন মন। যে মনকে আমরা ফিল করি সেটা চেতন মন। আমাদের সচেতন মন অত্যন্ত বিকশিত এবং বুদ্ধিমান। কিন্তু আসলে এর শক্তি খুবই কম আর তাতেই সমস্যা দেখা দেয়। আমরা জানি এবং বুঝি কিন্তু সেই ভুল কাজগুলোর নিয়ন্ত্রণ করতে অক্ষম। কারণ কাজ করা সম্পূর্ণরূপে অবচেতন মনের উপর নির্ভর করে। অতএব আপনি যদি অবচেতন মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, আপনি সহজেই সচেতন মনকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। মানুষের মনের সুখ-দুঃখ নিয়ন্ত্রণ করে শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, ভুলে যাওয়া স্মৃতি ফিরিয়ে আনা, আপনি ইচ্ছানুযায়ী জীবন গঠন করা, সাফল্যের শিখরে অস্থান করা ইত্যাদি অবচেতন মনের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে লাভ করা যায়।
২। অচেতন মন (Unconscious Mind)
অচেতন মন (Unconscious Mind) মাইন্ড এলগোরিদমে বা মনের পরিভাষায় তেমন একটা প্রভাব ফেলে না। অচেতন মন নিষ্ক্রিয় থাকে, যার কোনো কার্য সম্পাদনা করার সক্ষমতা নেই। আমাদের অচেতন চিন্তা এবং অনুভূতির উপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই কারণ সেগুলি আমাদের সচেতন মন থেকে লুকিয়ে থাকে। এটি চিন্তা, স্মৃতি, এবং সহজাত আকাঙ্ক্ষাগুলিকে ধারণ করে যা আপনার সচেতন সচেতনতার বাইরে৷ এগুলি এক প্রকার অজানা স্মৃতি তবুও আপনার আচরণের উপর প্রভাব বিস্তার করে৷ Roger Sperry নামক একজন গবেষক আবিস্কার করেন যে মস্তিষ্কের ডান এবং বাম অংশ উভয়েরই নিজস্ব বিশেষত্ব রয়েছে। তিনি গবেষণা করে বের করেন যে মস্তিষ্কের বাম অংশ শৃঙ্খলাবদ্ধ, বিশ্লেষণধর্মী এবং যুক্তিবিদ্যা বিষয়ক চিন্তায় ব্যবহৃত হয়। অপরদিকে ডান অংশ মুক্ত, আবেগতাড়িত এবং সৃষ্টিশীল চিন্তায় সহায়তা করে। মস্তিষ্কের এই বাম অংশটিই হলো আপনার সচেতন মন এবং ডান অংশটি অবচেতন মন।
৩। অবচেতন মন (Subconscious Mind)
মনোবিজ্ঞানে, যে চেতনা সচেতনতার সীমার মধ্যে নেই তাকে অবচেতন বলে। অবচেতন মন মানব চেতনার একটি অংশ। অবচেতন মন অভ্যন্তরীণ জগতের সাথে সংযোগ করে যেমন অতীত স্মৃতি এবং জৈবিক চাহিদা। অবচেতন মন, যদিও আমাদের সচেতন সচেতনতার বাইরে, কিছু প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমাদের সচেতন মনে আনা যায়। উল্লেখ্য, মানসিক রোগীদের এই প্রক্রিয়ার সাহায্যে চিকিৎসা করা হয়। আমাদের আবেগ (Emotions), আচরণ (Behavior), কল্পনা (Imagination), স্বপ্ন (Dreams) ইত্যাদি অনুভূতিগুলো মূলতঃ অবচেতন মনই নিয়ন্ত্রণ করে।
অবচেতন মনের প্রভাব
অবচেতন মন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অনেক কিছু প্রভাবিত করে, যেমনঃ
১. অভ্যাস ও আচরণ
অবচেতন মনের অভ্যাস ও আচরণে গভীর প্রভাব রয়েছে। আমাদের প্রতিদিনের অভ্যাস এবং আচরণগুলোর অনেকটাই অবচেতনভাবে পরিচালিত হয়, যার অর্থ আমরা সেগুলিকে সচেতনভাবে না বুঝে বা চিন্তা না করেই করে থাকি। অবচেতন মনের এই প্রভাব আমাদের ব্যক্তিত্ব, জীবনধারা, এবং সামগ্রিকভাবে জীবনের গুণগত মানকে গড়ে তোলে।
অভ্যাস গঠনে অবচেতন মনের প্রভাব
অভ্যাস হলো সেই আচরণ, যা আমরা বারবার পুনরাবৃত্তি করি এবং যা অবচেতনভাবে আমাদের জীবনের অংশ হয়ে যায়। যখন আমরা কোনো একটি কাজ একাধিকবার করি, তখন সেই কাজটি আমাদের অবচেতন মনে একটি "প্যাটার্ন" বা অভ্যাস হিসেবে গেঁথে যায়। উদাহরণস্বরূপ, প্রতিদিন সকালে উঠে দাঁত ব্রাশ করা, নির্দিষ্ট একটি রাস্তায় হাঁটা, বা কাজ শুরুর আগে কফি খাওয়া—এগুলো সবই অভ্যাস, যা অবচেতন মনে গেঁথে যায়। অবচেতন মনের মাধ্যমে গঠিত অভ্যাসগুলো ইতিবাচক বা নেতিবাচক হতে পারে। ইতিবাচক অভ্যাসগুলো আমাদের জীবনের মান উন্নত করে এবং সফলতার পথে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে, যেমন নিয়মিত ব্যায়াম করা, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, বা সময়মতো কাজ সম্পন্ন করা। অন্যদিকে, নেতিবাচক অভ্যাসগুলো আমাদের জীবনে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, যেমন ধূমপান করা, দেরিতে ঘুমানো, বা প্রয়োজনের বেশি চিন্তা করা।
Comments on “অবচেতন মনঃ আপনার মনের শক্তি আবিষ্কার করুন”